বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫, ৫ ভাদ্র ১৪৩২
কালবেলা ডেস্ক
গাজা ধ্বংসে ইসরায়েলের নতুন কূটকৌশল

গাজায় মানবিক সংকটকে পুঁজি করে জাতিগত নিধন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। জাতিসংঘ গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত মে মাস থেকে গাজায় অন্তত ৬১৩ জন ত্রাণপ্রত্যাশীকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। মূলত যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সমর্থিত বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে এসব হামলা পরিচালিত হয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা খাবারের সন্ধানে বেপরোয়া হয়ে উঠছে। খাবারের সন্ধানে প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে যাচ্ছে তারা। এদিকে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ত্রাণকেন্দ্রে গুলি ছোড়ার অভিযোগ নাকচ করে দিচ্ছে।

সম্প্রতি আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা ধ্বংসে নতুন কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে ইসরায়েল। বিভিন্ন ত্রাণকেন্দ্রে জাতিগত নিধনের জন্য সামরিক ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আলজাজিরার ওই প্রতিবেদনে সামরিক বিশ্লেষক ইউসুফ আলাবারদা জানান, সামরিক ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দায় এড়িয়ে যেতে পারছে। তার মতে, গণহত্যার জন্য আউটসোর্স করছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ ধরনের ঠিকাদারদের তথ্য সরকারি নথিতে সংরক্ষণের প্রয়োজন হয় না এবং তাদের কোনো জবাবদিহির আওতায় আনা হয় না। ফলে গাজায় কূটকৌশলে গণহত্যা পরিচালিত হচ্ছে। তিনি এ-ও জানান, এসব ঠিকাদারের মাধ্যমে গণহত্যার পাশাপাশি অনেক অন্যায় কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে। তাদের সামরিক উর্দি না থাকায় যে কোনো স্থানে সহজেই প্রবেশ করতে পারে।

এদিকে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত মানবিক সংগঠন গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনকে (জিএইচএফ) নিয়ে বিতর্ক দিনদিন বাড়ছেই। সংস্থাটির ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে কীভাবে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা হয়, তা নিয়ে মুখ খুলেছেন সংস্থাটির সাবেক এক নিরাপত্তা ঠিকাদার। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে তিনি জানান, কোনো কারণ ছাড়াই ত্রাণ নিতে আসা অভুক্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালায় ইসরায়েলি সেনারা। উদাহরণ হিসেবে একটি নির্দিষ্ট ঘটনা তুলে ধরেন তিনি। জানান, শুধু ত্রাণকেন্দ্র ছাড়তে দেরি হচ্ছিল বলে একদল নারী, শিশু আর বৃদ্ধের ওপর মেশিনগান দিয়ে গুলিবর্ষণ করে ইসরায়েলি সেনারা। তিনি বলেন, ‘যখন নারী-শিশু-বৃদ্ধদের ওপর গুলি চালানো হলো, তখন সেখানে থাকা আরেকজন ঠিকাদার, যিনি বের হওয়ার পথের ওপর একটি উঁচু মাটির বাঁধে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তিনি ভিড়ের দিকে টানা ১৫ থেকে ২০ রাউন্ড গুলি চালান। একজন ফিলিস্তিনি পুরুষ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকজন ঠিকাদার বলল, দারুণ! মনে হচ্ছে তুমি একটা স্কোর করেছ! এরপর তারা এ ঘটনা নিয়ে হাসাহাসি করতে শুরু করে।’

ওই ঠিকাদার বিবিসিকে বলেন, তিনি জিএইচএফ কর্তৃপক্ষের কাছে ঘটনাটি নিয়ে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা এটিকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। তাদের ভাষ্য ছিল, হয়তো ফিলিস্তিনি ওই লোকটি অসাবধানতাবশত পড়ে গেছে, অথবা দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল। বিবিসি এ বিষয়ে জিএইচএফের কাছে জানতে চাইলে তারা তা পুরোপুরি অস্বীকার করে। তাদের দাবি, জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে কখনো বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেনি।

খোদ ত্রাণ সংস্থার নিরাপত্তাকর্মীর গুলিতে ফিলিস্তিনি নিহতের বিষয়ে জিএইচএফের দাবি, যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগগুলো তুলছেন, তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে তিনি এসব মিথ্যা বলে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওই সাবেক ঠিকাদার বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন, তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়নি, বরং তিনি নিজেই চাকরি ছেড়েছেন।

চলতি সপ্তাহে ১৭০টির বেশি দাতব্য সংস্থা ও এনজিও জিএইচএফের কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়েছে। অক্সফাম ও সেভ দ্য চিলড্রেনসহ এসব সংগঠন বলছে, ইসরায়েলি বাহিনী ও সশস্ত্র দলগুলো নিয়মিতভাবে ত্রাণ চাইতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালায়। তবে ইসরায়েলের দাবি, তাদের সেনারা ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রাণ নিতে আসা লোকজনের ওপর গুলি চালায় না।

মন্তব্য করুন