শ্রীলঙ্কার ‘মিরপুর’ জিতলেন মেহেদী হাসান মিরাজরা। প্রথম লাইনেই মিরপুর দেখে চমকে যাওয়ার কথা যে কারোরই! কিন্তু রানাসিংহে প্রেমাদাসার পরিসংখ্যান তাই বলছে! শেষ ৯ ম্যাচে এখানে অপরাজিত চারিথ আশালঙ্কার দল। শেষ দেড় বছর এখানে কোনো ম্যাচই হারেনি তারা। ভারত, অস্ট্রেলিয়া কিংবা জিম্বাবুয়ের মতো দেশকে এখানে এনে নাকানিচুবানি খাইয়েছিলেন আশালঙ্কারা। বাংলাদেশ যেমন সিরিজ বাঁচাতে মিরপুর বেছে নেয়; শ্রীলঙ্কাও বেছে নেয় তেমনি রানাসিংহে প্রেমাদাসাকেই। স্পিনে এখানে কাবু করা যায় যে কাউকেই। আর সেই মাঠেই কি না জিতে তিন ম্যাচের সিরিজ ১-১ সমতায় আনলেন মিরাজরা। টানা সাত ম্যাচ হারের পর ওয়ানডেতে জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। ১৬ রানে জিতে হারের এই বৃত্ত ভাঙলেন অধিনায়ক মিরাজও। তার নেতৃত্বে প্রথমবার ওয়ানডেতে জিতল দল। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ফাইফারে দলকে জেতানোর নায়ক তানভীর ইসলামও।
কলম্বোতে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আগে ব্যাটিং করে ২৫ বল বাকি রেখেও ২৪৮ রানের পুঁজি পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেটা আর ছাপিয়ে যেতে পারেনি স্বাগতিকরা। ৭ বল বাকি রেখে শ্রীলঙ্কা থেমেছে ২৩২ রানে। বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে বাংলাদেশ পেল জয়ের স্বস্তি। চার ক্যাচ মিসেও যে ম্যাচ জেতা যায়, সেটা বাংলাদেশের জন্য ভাগ্যসূচকই বলা যায়। প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের এত এত সুযোগ দিয়েছিলেন তারা। অবশ্য কৃতিত্ব বোলারদেরই দিতে হবে। ২৯ রান খরুচে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন তানভীর। বোলিংয়ে দুর্দান্ত ছিলেন শামীম হোসেন পাটোয়ারী। অনিয়মিত বোলার হয়েও দশ ওভারে নিজের সেরাটা দেখিয়ে দিলেন তিনি। কেন ওয়ানডে দলে ফিরলেন; যেন তারই উত্তর দিলেন এই স্পিন অলরাউন্ডার।
আড়াইশ ছুঁতে না পারা বাংলাদেশের বিপক্ষে দাপুটে শুরু করেছিল শ্রীলঙ্কা। পাথুম নিশাঙ্কাকে শুরুতে ফিরিয়েও স্বস্তি এনে দিতে পারেননি তানজিম হাসান সাকিব। রীতিমতো ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ান তিনে নামা কুশল মেন্ডিস। ২০ বলে ফিফটি ছুঁয়ে হেলমেট খুলে চুমু এঁকে যেন বললেন, ‘ভয় পাও, আরও ভয়!’ তবে সে ভয়কে দ্রুত কাটান তানভীর ইসলাম। দারুণ এক ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। ৩১ বলে ৫৬ করে ফেরেন কুশল। আরেক ব্যাটার কামিন্দু মেন্ডিসও থিতু হয়ে বড় ইনিংসের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন; তাকেও ফেরাতে তানভীরই হলেন ত্রাতা। তবে বলে রাখা ভালো, সে সময় একপাশে রীতিমতো চেপে ধরেছিলেন স্পিনার শামীম। তার স্পিনে নাকানিচুবানি খাচ্ছিল লঙ্কান ব্যাটাররা। ৩২ রানে তো ক্যাচ তুলেও কিপার জাকের আলির হাতে জীবন পেয়েছিলেন কামিন্দু। যদিও সেটা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন ৩৩ রান করা এই ব্যাটার। লঙ্কানদের একপাশ ধসিয়ে দিয়েও ভয় কাটেনি বাংলাদেশের। জানিথ লিয়ানাগে অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেছিলেন। দুবার তার ক্যাচ হাত ফসকে পড়েছিল বাংলাদেশের ফিল্ডারদের। প্রথমবার রান ছিল ২৯ এবং দ্বিতীয়বার জীবন পাওয়ার সময় ৪২ রান ছিল লিয়ানাগের। চার-ছক্কার বৃষ্টিতে দলকে প্রায় জেতানোর মুখে নিয়েই মুস্তাফিজুর রহমানের শিকার হন তিনি। বাংলাদেশের উদযাপনে মনে হচ্ছিল, গলার কাঁটা নেমেছে অবশেষে। লঙ্কানদের যখন ২১ বলে দরকার ১৬ রান; তখনই ৭৮ রান করে আটকা পড়েন লিয়ানাগে। শেষ ব্যাটার দুশমন্ত চামিরার স্টাম্প ভেঙে ১৬ রানের জয় নিশ্চিত করেন তানজিম হাসান।
ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের পরিকল্পনা মোটামুটি কাজে লেগেছে। আগে ব্যাটিং করা এবং উইকেটে টিকে থাকা—দুটিই যে কাজে দেয়, সে কথা বলেছিলেন বাংলাদেশের প্রধান কোচ ফিল সিমন্স। চিকিৎসার জন্য ছুটিতে গেলেও আগেই দলকে বার্তা দিয়ে রেখেছিলেন তিনি। সে কাজটা উদ্বোধনী ব্যাটার পারভেজ হোসেন ইমন ও মাঝের দিকে তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাটেই দেখা মিলেছিল। ৬৭ রান করে শুরুর দিকটা সামলান ইমন। আর ৫১ রানে মাঝখানে ভিত গড়ে দেন তিনি। শেষ দিকে তানজিম হাসানের অপরাজিত ৩৩ রান বাংলাদেশের জয়ের মূল ব্যাখ্যাটাই করে দেয়।
মন্তব্য করুন