বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫, ৫ ভাদ্র ১৪৩২
মাওলানা আব্দুর রহমান
আশুরা উপলক্ষে রোজা

হিজরি ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস মহররমকে ইসলামে পবিত্র মাস হিসেবে গণ্য করা হয়। এ মাসের দশম তারিখে পুণ্যময় আশুরা। আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার এই দিনটিতে মহৎ সুযোগ। যারা আল্লাহপ্রেমী তারা এই দিনে রোজা, নামাজ, জিকির, কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি ইবাদত করেন। ইহুদিরাও এই দিনটি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে থাকে। পূর্বের নবীগণও এই দিনকে মূল্যায়ন করেছেন। এ মাসে নফল রোজা রাখার সওয়াব, অন্য সব নফল রোজার সওয়াবের চেয়ে বেশি। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মহররমের রোজা।’ (মুসলিম: ১৯৮৯)। বিশেষভাবে আশুরা তথা মহররমের ১০ তারিখ অত্যন্ত তাৎপর্য এবং মাহাত্ম্যপূর্ণ দিন। এই দিনে রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে এই দিনে রোজা রেখেছেন এবং স্বীয় উম্মতকে রোজা রাখার প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে রমজান এবং আশুরায় যেমন গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি, অন্য সময় তা দেখিনি।’ (বোখারি: ২০০৬)

হজরত আলি (রা.)-কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিল, রমজানের পর আর কোনো মাস আছে, যাতে আপনি আমাকে রোজা রাখার আদেশ করেন? তিনি বললেন, এ প্রশ্ন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জনৈক সাহাবি করেছিলেন, তখন আমি তার খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, রমজানের পর তুমি যদি রোজা রাখতে চাও, তবে মহররম মাসে রাখো। কারণ, এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহতায়ালা একটি জাতির তওবা কবুল করেছিলেন এবং ভবিষ্যতেও অপরাপর জাতির তওবা কবুল করবেন।’ (তিরমিজি: ৭৪১)

মহররমের ১০ তারিখে রোজা রাখার পাশাপাশি এর আগে বা পরে একটি রোজা অতিরিক্ত রাখতে বলা হয়েছে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় এসে দেখেন, ইহুদিরা আশুরার দিনে রোজা পালন করে। তিনি তাদের বলেন, এই দিনটির এমন কী মাহাত্ম্য যে তোমরা রোজা পালন করো? তারা বলে, এই দিনে আল্লাহ মুসা (আ.) ও তার জাতিকে মুক্তি দান করেন এবং ফেরাউন ও তার জাতিকে নিমজ্জিত করেন। এজন্য মুসা (আ.) কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এই দিন রোজা পালন করেছিলেন। তাই আমরা এই দিন রোজা পালন করি। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, মুসার (আ.) বিষয়ে আমাদের অধিকার বেশি। এরপর তিনি এই দিন রোজা পালন করেন এবং রোজা পালন করতে নির্দেশ প্রদান করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ইনশাআল্লাহ আগামী বছর আমরা মহররমের নবম তারিখেও রোজা রাখব। (মুসলিম: ১৯১৮)

এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, নবীজি (সা.) আমাদের বিজাতীয় সাদৃশ্য পরিহার করার শিক্ষা দিয়েছেন। তাই প্রথমত, আমাদের আশুরার রোজা একটির পরিবর্তে দুটি রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবনের সবক্ষেত্রে অমুসলিমদের সাদৃশ্য অবলম্বন পরিহার করতে হবে। এর বাইরে আর যত কিছু আছে মাতম, মর্সিয়া, মিলাদসহ সবকিছুই বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য। মিছিল, আতশবাজি ফোটানো, বিশেষ খাবার রান্না করা এসবের কোনো নিয়ম নেই। এ ছাড়া এই দিনের বিশেষ নামাজ, বিশেষ দোয়া-দরুদ বা আমল নেই। তবে স্বাভাবিকভাবে অন্যদিনের মতোই এদিন নফল আমল করতে পারবে। তবে নফল রোজার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। আল্লাহতায়ালা আমাদের মহররম মাসে বেশি বেশি রোজা রাখার এবং আশুরার তাৎপর্য অনুধাবন করে তদনুযায়ী আমল করার এবং সব ধরনের গুনাহ বর্জন করার তওফিক দান করুন।

লেখক: ইমাম ও খতিব

মন্তব্য করুন