বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫, ৫ ভাদ্র ১৪৩২
ফাস্টনিউজ
কঠোর হতে হবে

থামছেই না আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটছে। এবার কুমিল্লার মুরাদনগরে গ্রামবাসী সহিংস উপায়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে এক পরিবারের তিন সদস্যকে। আইন ও বিচারের দ্বারস্থ না হয়ে মানুষ যখন নিজেই বিচারের ভার হাতে তুলে নেয়, অর্থাৎ নৃশংসতার পথ বেছে নেয় এবং সে প্রবণতা যখন দিন দিন বাড়তে থাকে, তখন তা অবশ্যই গভীর উদ্বেগের।

শুক্রবার কালবেলায় প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে কুমিল্লার মুরাদনগরে মাদক কেনাবেচার অভিযোগ এনে এক নারী এবং তার দুই ছেলেমেয়েকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করার ঘটনাকে প্রাথমিকভাবে গ্রামবাসীর পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় দিকে ভাঙ্গরা থানার আকবপুর ইউনিয়নের কড়ইবাড়ি গ্রামে বর্বর এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই নারীর আরেক মেয়েকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিহতরা হলেন কড়ইবাড়ি গ্রামের জুয়েল মিয়ার স্ত্রী রোকসানা আক্তার রুবি, তার ছেলে রাসেল মিয়া ও মেয়ে জোনাকি আক্তার। ঘটনার পেছনে পরিবারটির মাদক কারবারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকাই প্রধান কারণ হিসেবে জানা গেলেও শুক্রবার কালবেলায় প্রকাশিত খবর বলছে ভিন্ন কথা। গত মঙ্গলবার সকালে কড়ইবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রুহুল আমীন কড়ইবাড়ি বাজারে ফটোকপি করতে যান। সে সময় ওই দোকানে এক কিশোরও আসে। সেখানে ওই শিক্ষকের মোবাইল ফোন চুরি হয়। ওই কিশোরকে ধরে তা উদ্ধার করা হয়। ওই কিশোর নিহত রোকসানা আক্তার রুবির আত্মীয়। নিহত রুবি মোবাইল চুরির ঘটনা নিয়ে ওই শিক্ষক ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বাচ্চু মিয়াকে কিল-ঘুসি মারেন। বুধবার বিকেলে তিন রাস্তার মোড়ে মারধরের শিকার বাচ্চু মিয়াসহ এলাকাবাসী একত্রিত হয়। ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহও সেখানে আসেন। বুধবার বিকেলে সিদ্ধান্ত নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে এলাকাবাসী জড়ো হতে থাকে। সকাল ৯টার দিকে পরিকল্পিতভাবে ওই বাড়িতে হামলা করা হয়। উপস্থিত গ্রামবাসী রুবি ও তার মেয়ে জোনাকিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। খবর পেয়ে শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যাওয়া রুবির ছেলে রাসেল মোটরসাইকেলে করে ছুটে আসেন। বাড়ির গেটে আসার পরপরই উপস্থিত জনতা তার ওপর চড়াও হয়। তাকেও কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেননা সেখানে দুদিন ধরে এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ঘটনার আগের দিন এলাকার সবাই একত্রিত হয়। সিদ্ধান্ত হয়, এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে ওই পরিবারকে ‘উচ্ছেদ’ করবে। বিষয়টি জানা সত্ত্বেও সময়োচিত দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। এ ক্ষেত্রে পুলিশের গাফিলতির বিষয়টিও তদন্তযোগ্য। পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে গণপিটুনির ঘটনায় কমপক্ষে প্রাণ হারান ৯৪ জন।

বিরাজমান ‘মব সংস্কৃতি’ বা মব সৃষ্টি করে হামলা, গণপিটুনি, হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা বন্ধে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাজুক অবস্থা নিয়ে এরই মধ্যে বারবার এ সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে। আবারও উল্লেখ করতে হচ্ছে, উদ্ভূত পরিস্থিতি কোনোভাবেই চলতে দেওয়া যাবে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই। তা না হলে, জবাবদিহির অভাব ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে আইন ও বিচারের তোয়াক্কা না করে ভয়ানক এ প্রবণতা দিন দিন আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। আমাদের প্রত্যাশা, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও উচিত মানবিক ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।

মন্তব্য করুন