বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে ত্যাগ আর বিপ্লবের আদর্শ নিয়ে সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন যারা, তাদের মধ্যে কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ অন্যতম ব্যক্তি। বাংলাদেশে বাম ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি ছিলেন অবিসংবাদিত নেতা। মেধা আর অধ্যবসায়ের জোরে তিনি জাতীয় নেতার পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন, নির্বাচিত হন জাতীয় সংসদ সদস্য।
কমরেড ফরহাদের জন্ম ১৯৩৮ সালের ৫ জুলাই, দিনাজপুরে। তার ডাকনাম ছিল বাদল। রাজনৈতিক ছদ্মনাম ছিল কমরেড কবির। তাকে বলা হতো ‘বাংলার লেনিন’। তার পিতা আহমেদ সাফাকাত আল বারি ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। ফরহাদ ১৯৫২ সালে মহান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে দিনাজপুর জেলা স্কুলের ছাত্র হিসেবে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। চল্লিশের দশকের বিশ্ব রাজনীতিতে ঘটে যাওয়া ভারতের স্বাধীনতা, চীনের বিপ্লব এবং ১৯৪৮ সালের দিকে দিনাজপুরের তেভাগা আন্দোলন তার রাজনৈতিক মতাদর্শ তৈরিতে প্রভাব রাখে। এ সময় তিনি রাজনীতিতে প্রভাবিত হন এবং সমাজতন্ত্রের প্রতি আকর্ষিত হয়ে দিনাজপুর কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গঠিত ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা বাহিনীর অন্যতম প্রধান সংগঠক ও নেতা ছিলেন তিনি। পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সাম্যবাদী আদর্শে সংগ্রামী ও আত্মত্যাগী রাজনৈতিক জীবনে অনেকটা সময় তাকে কারাবন্দি এবং আত্মগোপনে কাটাতে হয়। ১৯৮৭ সালের ৯ অক্টোবর রাশিয়ার মস্কো শহরে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে নিভে যায় দেশের এ উজ্জ্বল রাজনৈতিক জ্যোতিষ্কের জীবন প্রদীপ।
মন্তব্য করুন