বাংলাদেশ পুলিশকে সত্যিকার অর্থে জনবান্ধব ও মানবিক পুলিশ বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সংস্কারের বিকল্প নেই। বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি আয়োজিত ‘বাংলাদেশ পুলিশ সংস্কার: প্রেক্ষিত নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তাদের আলোচনায় এমন অভিমত উঠে এসেছে। গতকাল শনিবার বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি ড. এম. আকবর আলীর সভাপতিত্বে প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গোলটেবিল বৈঠকটির আয়োজন করা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি ড. মো. মতিয়ার রহমান। তিনি বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীর বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ হলো, ঔপনিবেশিক আইন ও কাঠামো, মানবসম্পদ ও প্রযুক্তিগত ঘাটতি, দুর্নীতি ও জবাবদিহির অভাব এবং কর্মচাপ ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। এজন্য প্রয়োজন আধুনিক ও গণমুখী আইন প্রণয়ন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, পেশাগত প্রশিক্ষণ ও মনোভাব পরিবর্তন, পুলিশকে অযাচিত রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা, কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থার বাস্তবায়ন, প্রযুক্তির ব্যবহার ও দক্ষতা বৃদ্ধি, সুশৃঙ্খল ও মানবিক বাহিনী এবং পুলিশের সেবামুখিতা অর্জন। পুলিশ বাহিনীর কাজের ওপর নিরপেক্ষভাবে নজরদারি নিশ্চিত করতে একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন এখন সময়ের দাবি। এ কমিশনে সাবেক ও বর্তমান বিচারপতি, সরকারি কর্মকর্তা, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও নারীসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধি থাকবেন।’
গোলটেবিল বৈঠকে মুখ্য আলোচক ছিলেন আমার দেশ সম্পাদক ও প্রকাশক ড. মাহমুদুর রহমান। বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি মো. আব্দুর রহমান খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা। মুখ্য আলোচক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, পুলিশ সংস্কার করতে হলে পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে, পুলিশ সদস্যদের বেঁচে থাকার মত সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে, পুলিশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে, পুলিশের প্রশিক্ষণ আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে হবে, র্যাব থেকে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করতে হবে। এ ছাড়া তিনি এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এবং পুলিশের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা কমিটি গঠনের সুপারিশ করেন।
পুলিশের পদোন্নতি, পোস্টিংয়ের জন্য আলাদা আইন থাকা প্রয়োজন উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. বোরহান উদ্দিন বলেন, কোনো সরকারই পুলিশ কমিশন করতে চাইবে না। তিনি বলেন, পুলিশকে মিলিটারি ইকুপমেন্ট ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, পুলিশের নিয়োগ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। পুলিশ সদস্যদের সম্মানজনক বেতন-ভাতাদি দিতে হবে।
বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেন, শেখ হাসিনা পুলিশকে গণশত্রুতে পরিণত করেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন, ঔপনিবেশিক আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে পুলিশ সংস্কার করতে হবে। শুধু পুলিশ সংস্কার করলেই হবে না, প্রশাসনও সংস্কার করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ড. এম. আকবর আলী বলেন, ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনে নিয়ন্ত্রণের কথা বলা আছে। পুলিশের জনসম্পৃক্ততার কথা নেই। পুলিশকে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের আওতায় আনতে হবে। পুলিশের মনোবল বৃদ্ধির জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন খেলাফত মজলিস বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ড. আহমেদ আবদুল কাদের, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য জারিফ রহমান, সাবেক বিচারপতি ফরিদ আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারিকুল।
মন্তব্য করুন