বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাতের বিশেষ আইনের অধীনে হওয়া ৩৭টি এলওআই ইস্যুকৃত সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাতিলকৃত সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর পুনর্বিবেচনা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সমিতির (বিএসআরইএ) নেতৃবৃন্দ। একই সঙ্গে এ প্রকল্পগুলো বাতিলের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনাস্থা তৈরি হওয়ার কারণে ৫৫টি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলেও কেউ আগ্রহ দেখায়নি।
গতকাল দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বিএসআরইএ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মো. মোস্তফা আল মাহমুদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারি আতাউর রহমান সরকার রোজেল, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জাহিদুল আলম, আবু তাহের, শেখ মোহাম্মদ রুহুল আমিন, ফাইন্যান্স ডিরেক্টর নিতাই পদ সাহা প্রমুখ।
গত ১ জুলাই এক অনুষ্ঠানে বাতিল হওয়া ৩৭টি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর ব্যাপারে সরকারকে সিদ্ধান্ত পুনর্মূল্যায়নের পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। একই সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে পর্যাপ্ত সুবিধা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। ১৪টি দেশের অর্থায়নের এসব প্রকল্পের মধ্যে চীনের চারটি, সিঙ্গাপুরের সাতটি এবং ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে একটি করে প্রকল্প। এসব প্রকল্পে ছয় বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করার কথা ছিল।
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির সভাপতি মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, সরকার এরই মধ্যে ৫৫টি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে, এটি অবশ্যই ইতিবাচক। তবে আমরা লক্ষ করছি, এসব প্রকল্পে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ আশানুরূপ নয়। কিছু প্রকল্পে মাত্র একজন দরদাতা অংশ নিয়েছেন, আবার কিছুতে কেউই আগ্রহ দেখাননি। আমরা মনে করছি, আগের প্রকল্পগুলো বাতিল করায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাতিলকৃত প্রকল্পগুলোয় প্রায় ৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। আমরা বাতিলকৃত প্রকল্পগুলো পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তির নীতিমালা-২০২৫ প্রকাশ করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। এটি দেশের নবায়নযোগ্য খাতের জন্য ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে। বিশেষভাবে সব সরকারি ভবনের ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে বিদ্যুৎ খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তর ঘটবে। তিনি বলেন, বাজেটে ইনভার্টারের শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি সোলার শিল্পের অন্যান্য যন্ত্রপাতির ওপর কর হ্রাসের প্রতিফলন থাকা দরকার। মাউন্টিং স্ট্রাকচার, ডিসি কেবল, কন্ট্রোলার, ব্যাটারি ও সোলার পাম্পের ওপর উচ্চ শুল্ক বিদ্যমান। এসব পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক কমিয়ে সহায়ক কাঠামো গড়ে তোলা জরুরি।
তারা বলেন, দেশের প্রাকৃতিক গ্যাস দিন দিন কমে যাওয়ায় জ্বালানি খাত আমদানিনির্ভর হয়ে পড়ছে, যা বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ তৈরি করছে। সুতরাং নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্প্রসারণ এখন সময়ের দাবি। আমরা একটি স্থিতিশীল, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ চাই— যেখানে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বিনিয়োগকারীরা আস্থা পাবে এবং দেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত একটি নির্ভরযোগ্য ভবিষ্যৎ গন্তব্য হিসেবে গড়ে উঠবে।
মন্তব্য করুন