বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে পটুয়াখালী জেলা বিএনপির ত্রিবার্ষিক সম্মেলন-২০২৫। কোনো রকম ঝুটঝামেলা ছাড়াই দীর্ঘ ২৩ বছর পর অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষে ব্যালটের মাধ্যমে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা বেছে নিয়েছেন পছন্দের নেতৃত্বকে। নতুন নেতৃত্ব পেয়ে উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মীরা। গত বুধবার পটুয়াখালী ব্যায়ামাগার হলরুমে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে স্নেহাংশু সরকার কুট্টি ৭৫৫ ভোট পেয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাকসুদ আহাম্মদ বায়জিদ (পান্না) পেয়েছেন ৪০২ ভোট। এদিকে, ৪৭৪ ভোট পেয়ে সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী হন মজিবুর রহমান টোটন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বসির আহমেদ পেয়েছেন ৪২০ ভোট।
বৃষ্টি ভেজা আবহাওয়ার মধ্যেই বুধবার সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সম্মেলন চত্বরে জড়ো হন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সকাল ১০টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উড্ডয়নের মাধ্যমে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের উদ্বোধন করেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু। উদ্বোধন ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ চুন্নু মিয়ার সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টির সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেনসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ। পরে বিকেলে সম্মেলনের প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
প্রথম অধিবেশন শেষে একই স্থানে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় অধিবেশন। এই অধিবেশনে প্রত্যক্ষ ভোট প্রদানের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করেন ১ হাজার ৫১৪ জন ডেলিগেট ও কাউন্সিলররা। সম্মেলনে সভাপতি পদে ২ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সভাপতি পদে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টি ও মাকসুদ আহাম্মদ বায়জিদ (পান্না) এবং সাধারণ সম্পাদক পদে মনিরুল ইসলাম লিটন, অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান টোটন, বশির আহম্মদ মৃধা, অ্যাডভোকেট তৌফিক আলী খান (খান কবির), মো. সাইদুর রহমান তালুকদার ও মো. দেলোয়ার হোসেন নান্নু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর আগামী নির্বাচনের আগে দল গোছাতে নতুন কমিটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নতুন কমিটি প্রসঙ্গে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও পটুয়াখালী-৩ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী হাসান মামুন বলেন, এককথায় বললে সম্মেলনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার সঙ্গে জেলা বিএনপির নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এটি সময়োপযোগী ভালো কমিটি হয়েছে। আশা করছি, নতুন কমিটির নেতারা দলকে আরও ভালোভাবে গতিশীল করবেন। স্থানীয় আরও কয়েকজন নেতা কালবেলার কাছে এমন প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেন।
জানতে চাইলে নবনির্বাচিত সভাপতি স্নেহাংশু সরকার কুট্টি বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এরপর জেলা যুবদলের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। ১৯৮২ সালের পর থেকে আমার বিরুদ্ধে সময়ের পরিক্রমায় অনেক মামলা-হামলা হয়েছে। তবুও শেষ পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গেই আছি। ২০০১ সালে ৪২ বছর বয়সে জেলা বিএনপির সেক্রেটারি হয়েছিলাম। স্থানীয় নেতাকর্মীরা মতামত দিয়ে আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করেছেন। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব দলকে সুশৃঙ্খল, সুসংসত ও গতিশীল করতে।
২০০২ সালের ১৪ এপ্রিল সর্বশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলা কমিটি গঠিত হয়। ২০০৪ সালে ওই কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও তা দিয়েই চলতে থাকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত। ২০০৯ সালের ৯ জুন জেলা কমিটি ভেঙে আব্দুর রশিদ চুন্নু মিয়াকে আহ্বায়ক করে প্রথমে ৫১ সদস্য এবং পরে ৫৮ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৩ সালের ১৪ মে সম্মেলন ছাড়াই কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসভাপতি, সাবেক স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্যমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে সভাপতি ও এমএ রব মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৬৯ সদস্যবিশিষ্ট পটুয়াখালী জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটি ২০২০ সালের ২ নভেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে। ওই বছরের ৩ নভেম্বর ফের আবদুর রশিদ চুন্নু মিয়াকে আহ্বায়ক ও স্নেহাংশু সরকার কুট্টিকে সদস্য সচিব করে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়।
মন্তব্য করুন