জলবায়ুবিজ্ঞানীদের জন্য বড় ধাক্কাই বটে! তেল ও গ্যাস উৎপাদন থেকে নির্গত মিথেন গ্যাস শনাক্ত করার জন্য ৮ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের অত্যাধুনিক কৃত্রিম উপগ্রহ মিথেনস্যাট মহাকাশে হারিয়ে গেছে। স্যাটেলাইটটি হারিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে জলবায়ু গবেষণা সংশ্লিষ্টদের কপালে। কারণ এতদিন মিথেনস্যাটের মাধ্যমে উষ্ণতা বৃদ্ধিকারক গ্রিনহাউস গ্যাস মিথের উৎস সম্পর্কে নানা তথ্য সংগ্রহ করা হতো। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে নির্গমন কমানোর লক্ষ্যও নির্ধারণ করেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু স্যাটেলাইটটি হারিয়ে যাওয়ায় সে কাজে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে।
স্যাটেলাইটের তত্ত্বাবধান করছে এনভায়রনমেন্ট ডিফেন্স ফান্ড (ইডিএফ) নামে এক এনজিও। অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে থাকা এ স্যাটেলাইটের প্রাপ্ত তথ্য সর্বজনীনভাবে উন্মুক্ত করার কথা ছিল। প্রকল্পে গুগল ও জেফ বেজোসের মতো ব্যক্তিত্ব ও সংস্থা ৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছে। এ উপগ্রহে ব্যবহৃত যন্ত্রগুলো বিশ্বের অন্যতম সংবেদনশীল, যা ছোট আকারের মিথেন উৎস এবং ‘সুপার-এমিটার’ উভয়কেই শনাক্ত করতে সক্ষম। সংবেদনশীলতা উন্নত করা কৃষিক্ষেত্র থেকে নির্গমন শনাক্ত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ উৎসগুলো প্রায়ই তেল ও গ্যাস উৎপাদনের চেয়ে অনেক বেশি বিক্ষিপ্ত হয়। এ উপগ্রহ যখন উৎক্ষেপণ করা হয়, তখন আশা করা হয়েছিল, এটি বিদ্যমান সরঞ্জামগুলোর মধ্যে থাকা দুর্বলতা ঘোচাবে। গুগল তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ডাটা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে একটি বৈশ্বিক মিথেন মানচিত্র তৈরিরও পরিকল্পনা করেছিল।
ইডিএফ জানিয়েছে, পাঁচ বছরব্যাপী প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে কক্ষপথে মাত্র এক বছর থাকার পরই প্রায় ১০ দিন আগে মিথেনস্যাটের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গত ২০ জুন স্যাটেলাইটের সংকেত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আগে এটিকে নরওয়ের আকাশে শেষ দেখা গেছে। এ সময় তেল ও গ্যাস উৎপাদন করা অঞ্চলের মিথেন নির্গমন পরিমাপ করছিল স্যাটেলাইটটি। ইডিএফ দল সন্দেহ করছে, উপগ্রহটি শক্তি হারিয়েছে। তারা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এটি সম্ভবত পুনরুদ্ধার করা যাবে না। স্যাটেলাইটটি কোথায় হারিয়েছে তা পরবর্তী সময়ে তদন্তসাপেক্ষে জানা যাবে। তারা আরও জানিয়েছে, এখনো কিছু সফটওয়্যার ফের ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে নতুন উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হবে কি না, সে বিষয়ে মন্তব্য করার সময় এখনো হয়নি। সংস্থাটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জলবায়ু চ্যালেঞ্জ সমাধানের জন্য সাহসী পদক্ষেপ এবং ঝুঁকি নেওয়া প্রয়োজন এবং এ উপগ্রহ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং অ্যাডভোকেসির ক্ষেত্রে অগ্রণী ছিল।’
মন্তব্য করুন