বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫, ৫ ভাদ্র ১৪৩২
রংপুর ও সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি
বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন কল্পনাও করা যায় না

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন কল্পনাও করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রংপুর জিলা স্কুল মাঠে মহানগরী ও জেলা জামায়াত আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতগুলো মৌলিক সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। আমরা সেই সংস্কারগুলোর কথা বলেছি। আমরা সংস্কারগুলো আদায় করে ছাড়ব। সুষ্ঠু নির্বাচনও ইনশাআল্লাহ আদায় করে ছাড়ব।

তিনি আরও বলেন, কেউ যদি আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলের নির্বাচনের স্বপ্ন দেখে থাকেন, আমরা মহান আল্লাহর সাহায্যে সেই স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করব। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না। কোনো প্রশাসনিক ক্যু করতে দেওয়া হবে না। ভোটকেন্দ্রে কোনো মাস্তানতন্ত্র চলতে দেওয়া হবে না। কালো টাকার কোনো খেলা সহ্য করা হবে না।

আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বহু ধরনের ষড়যন্ত্রের কথা শুনছেন দাবি করে জামায়াত আমির বলেন, বহু ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আলামত বুঝতে পারছি। আমরা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি—এই শেখ হাসিনা, তার হাতে সব বাহিনী ছিল। দোর্দণ্ড প্রতাপ ছিল, জায়গায় জায়গায় নিজের লোক বসিয়েছিলেন। মান্তানদের দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু যখন জনগণের জাগরণ, জনগণের বিস্ফোরণ হয়েছে, তখন কি তাকে আর কেউ রক্ষা করতে পেরেছেন? তাহলে যেই জনগণ এত মূল্য দিয়ে একটা পরিবর্তন এনেছে, সেই জনগণ আরেকটা ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে দেবে না ইনশাআল্লাহ।

তিনি আরও বলেন, আমরা কথা দিচ্ছি, ফ্যাসিবাদবিরোধী এই লড়াই ততদিন চলবে, যতদিন দেশে ফ্যাসিবাদের সামান্য চিহ্নও থাকবে। ফ্যাসিবাদকে নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত আমাদের লড়াই কেউ থামাতে পারবে না।

শফিকুর রহমান তার বক্তব্যের একপর্যায়ে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে আগামী নির্বাচনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন।

সমাবেশে সদ্য কারামুক্ত দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেন, কারও প্রতি কোনো ক্ষোভ নেই, দুঃখ নেই। রংপুরের জনগণ কেউ বলতে পারবে না আমি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। আমি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। কিন্তু আমাকে অপরাধী বানানো হলো। রংপুরের জনগণ সাক্ষী, যারা সাক্ষ্য দিয়েছে তারাও কিন্তু পরে বলেছেন, আমাদের জোর-জুলুম করে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা হয়েছে।

জনসভায় অন্তর্বর্তী সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ না হলেও তারা জুলাই অভ্যুত্থানকে ধারণ করতে পারেনি বলে মন্তব্য করে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে কেউ কেউ নিজেদের ক্ষমতাসীন বা প্রধান দলের পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আমি তাদের বলতে চাই, আগামী দিনে দেশের মানুষ ভোটের মাধ্যমে নির্ধারণ করবে কারা ক্ষমতাসীন দল হবে, কারা হবে প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। তাই এই ধরনের পরিচয় দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।

চার দফা দাবিতে আয়োজিত এই বিভাগীয় জনসভার মধ্য দিয়ে ১৭ বছর পর রংপুরে বড় পরিসরে কোনো কর্মসূচির আয়োজন করল জামায়াত। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদসহ নিহত ব্যক্তিদের হত্যার বিচার, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ ও রাজনৈতিক সংস্কার, উত্তরাঞ্চলের বহু দিনের দাবি ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ দ্রুত বাস্তবায়ন এবং বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ গঠনের অঙ্গীকার।

জনসভা উপলক্ষে গতকাল সকাল থেকেই রংপুর জিলা স্কুল মাঠে জড়ো হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। দুপুর থেকে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে ঢল নামে হাজারো মানুষের। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে পুরো মাঠ। আশপাশের দুই কিলোমিটার সড়কজুড়ে মানুষ অবস্থান নেন। বেলা ৩টায় স্থানীয় নেতাদের বক্তব্যের মাধ্যমে জনসভার কার্যক্রম শুরু হয়। সভায় আরও বক্তব্য দেন জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রমুখ।

এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কীসের, কী নির্বাচন হবে: লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় হামলা চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা পাওয়া দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে জামায়াত আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কীসের? কী নির্বাচন হবে? এ জন্য আগে নির্বাচনের পরিবেশ অবশ্যই তৈরি করতে হবে।’ গতকাল দুপুরে নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমির এ মন্তব্য করেন। নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্যই সংস্কারের প্রশ্নগুলো এসেছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি, যদি মৌলিক বিষয়গুলোতে কার্যকর সংস্কার হয়, তাহলে আলহামদুলিল্লাহ একটা ভালো নির্বাচন হবে। এবং ‘যদি’র কোনো সুযোগ নেই। সংস্কার করতে হবে এবং ভালো নির্বাচনও করতে হবে।’ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ শেষে দলের জনসভায় যোগ দিতে রংপুরের উদ্দেশে যাত্রা করেন জামায়াতের আমির।

মন্তব্য করুন