চিটাগাং ক্লাবে চলছিল চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাহেদুল হকের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান। সেখানে জাহেদুল উপস্থিত আছেন—এমন খবরে তাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে ওই ক্লাবের ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এতে অনুষ্ঠানে আসা অতিথিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ও যৌথবাহিনী ক্লাবে আসে। প্রায় তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর সেখানে জাহেদুল হককে পাওয়া যায়নি বলে জানায় পুলিশ। গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। জাহেদুল হক চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের কর্মকর্তা বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সেনাবাহিনীর সদস্যরা চিটাগাং ক্লাবের মূল ফটকে অবস্থান নেওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোকারীদের সঙ্গে কথা বলার পর তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এর আগে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের অবস্থানের খবর পেয়ে চিটাগাং ক্লাবে উপস্থিত হয় কোতোয়ালি থানা পুলিশ। বোয়ালখালী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যানের উপস্থিতির কথা শুনে পুলিশ ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করলে চিটাগাং ক্লাবের সিকিউরিটির বাধার মুখে পড়ে। তখন চিটাগাং ক্লাবের সিকিউরিটির পক্ষে পুলিশকে জানানো হয় যে, অস্ত্র নিয়ে অনুষ্ঠান মঞ্চে প্রবেশ করা যাবে না। যদি প্রবেশ করতেই হয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে সেনাবাহিনী চিটাগাং ক্লাবে অবস্থান নেয়। সে সময় বিক্ষোভকারীরা ক্লাবের সামনে স্লোগান দিচ্ছিলেন। বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে বের হওয়ার সময় অতিথিদের গাড়ি তল্লাশি করেন তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম নগর কমিটির সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিন বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদুল হকের ছেলের বিয়ে চিটাগং ক্লাবে। তিনি আওয়ামী লীগের নেতা। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। তাই তাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। কর্মসূচিতে এনসিপি, জাতীয় যুবশক্তির নেতাকর্মীরাও উপস্থিত আছেন।
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, বিয়ের অনুষ্ঠানে জাহিদুল হক আছেন, এমন খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ও এনসিপির নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছেন। তারাও খবর পেয়ে এসেছেন। কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
এক বিক্ষোভকারী সাংবাদিকদের বলেন, জাহেদুল হক স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের চিহ্নিত নেতা। তার বিরুদ্ধে ১২টির মতো মামলা আছে। জুলাই আন্দোলন দমাতে তিনি শেখ হাসিনাকে ১১ কোটি টাকা দিয়েছিলেন। প্রশাসন তাকে গ্রেপ্তার করেনি, যার কারণে তিনি প্রকাশ্যে ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান করতে পারছেন। প্রশাসন যদি তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করত, তাহলে আমাদের এখানে আসতে হতো না।
কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুল করিম কালবেলাকে বলেন, এক আওয়ামী লীগ নেতা ছেলের বিয়েতে উপস্থিত হয়েছেন শুনে কিছু ছাত্র-জনতা চিটাগাং ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেন। ঘটনাস্থলে আমরা অবস্থান নিয়ে তাদের অনুষ্ঠানে কোনো আসামি উপস্থিত থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে শান্ত করি। অনুষ্ঠানে কাউকে পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগ নেতা জাহেদুল হক অনুষ্ঠানস্থলে আছেন কি না, সেটা পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি।
মন্তব্য করুন