বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫, ৫ ভাদ্র ১৪৩২
ফাস্টনিউজ
বর্ষায় শিশুর যত্ন

গরম থেকে স্বস্তি দেয় বৃষ্টি। তবে পরিবারের ছোট সদস্যকে এ মৌসুমে নিরাপদ ও আরামে রাখতে বড়দেরই সচেষ্ট হতে হয়। বর্ষাকালে শিশুদের বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন, কারণ এ সময়ে আবহাওয়া আর্দ্র এবং বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। শিশুর পরিচ্ছন্নতা, পোশাক, খাদ্যাভ্যাস এবং পরিবেশের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি।

সঠিক পোশাক পরানো

বর্ষার শিশুর পোশাক যথাযথ হওয়া আবশ্যক। বাতাস চলাচল করে, হালকা তন্তু যা সহজে শুকিয়ে যায় এমন পোশাক পরানো উচিত। মোটা, ডেনিম পোশাকে ঘাম আটকে থাকে; ফলে শিশুর অস্বস্তি লাগে। পানিরোধী বা পানি প্রতিবন্ধক জ্যাকেট, রেইনকোট শিশুকে বৃষ্টি থেকে বাঁচায়। এ ছাড়া বাইরে যাওয়ার সময় শিশুর জন্য একসেট বাড়তি কাপড় সঙ্গে রাখা উচিত, যেন যখন-তখন বৃষ্টিতে শিশুর পোশাক বদলে নেওয়া যায়।

ভেজা ডায়াপার এড়িয়ে চলা

বর্ষাকালে ভেজা ডায়াপার শিশুর র্যাশ ও অস্বস্তি সৃষ্টি করে। তাই ডায়াপার ভিজে উঠেছে কি না, তা কিছুক্ষণ পরপর দেখে নেওয়া প্রয়োজন। শিশুকে নিরাপদ ও সুস্থ রাখতে ভেজা ডায়াপার পাল্টে দিতে হবে। আর হালকা, আরামদায়ক উন্নতমানের এবং রাসায়নিক উপাদানমুক্ত ডায়াপার ব্যবহার করাতে হবে। শিশুকে শুষ্ক ও র্যাশমুক্ত রাখতে দীর্ঘ শোষণ ক্ষমতাসম্পন্ন ডায়াপার ব্যবহার করতে হবে। অস্বস্তি ও ভেজাভাব কমাতে ডায়াপার র্যাশ ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রতিদিন গোসল করাবেন না

বর্ষাকালে আবহাওয়া একটু ঠান্ডা থাকে, তাই প্রতিদিন শিশুকে গোসল করাবেন না। সপ্তাহে দুই-তিনবার গোসল করালেই হবে। একই সঙ্গে শিশুকে বাইরে নিয়ে যেতে হলে তাকে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করান।

খাবার ও পানীয়

বর্ষাকালে শিশুদের বিশুদ্ধ পানি পান করানো উচিত। রাস্তার খাবার বা অপরিষ্কার খাবার এড়িয়ে যাওয়া উচিত।

ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা

শিশুর নিজস্ব পরিচ্ছন্নতার দিকে মনোযোগী হতে হবে। সাবান দিয়ে হাত ধোয়া জরুরি। বিশেষ করে খাবারের আগে এবং বাইরে খেলাধুলা করার পর। ময়লা ও জীবাণু থেকে সুরক্ষিত রাখতে শিশুর নখ কেটে ছোট রাখতে হবে। এ মৌসুমে শিশুকে মাটিতে বা নিচে খেলতে দিলে ব্যাকটেরিয়া, অণুজীবের সংক্রমণ ও সংবেদনশীলতার ঝুঁকি বাড়ে। ফলে ঘন ঘন মৌসুমি অসুখ যেমন—ঠান্ডা, কাশি ও পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। তাই মেঝেতে বসা রোধ করতে হবে। এ ছাড়া মশা থেকে বাঁচতে খেলাধুলা ও ঘুমানোর সময় বা মশারি বা মলম বা অন্যান্য প্রতিরোধক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

আবহাওয়া বার্তা সম্পর্কে সচেতন থাকা

বাইরে যাওয়ার আগে অবশ্যই আবহাওয়া বার্তা শুনে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে বের হতে হবে। বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলে বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ দেওয়া অথবা বাইরে গেলেও শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে নিতে হবে। সম্ভব হলে শিশুকে ব্যস্ত রাখে এমন ঘরোয়া খেলা, বোর্ডগেম ইত্যাদির ব্যবস্থা করা যায়।

শিশুর ত্বক আর্দ্র রাখা

শুষ্ক বা চুলকানিযুক্ত ত্বকে অস্বস্তি হয়, ফলে শিশু খিটখিটে হয়ে যায়। এ সমস্যা কমাতে শিশুর ত্বক আর্দ্র রাখতে হবে। এজন্য রাসায়নিক উপাদানমুক্ত, প্রাকৃতিকভাবে আর্দ্রতা রক্ষাকারী উপাদানে তৈরি প্রসাধনী ব্যবহার করতে হবে।

মশা থেকে সুরক্ষা

বর্ষাকালে বাড়ে মশার উৎপাত, যা ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই মশার আক্রমণ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে জানালায় মশারি বা জাল লাগান। আর অবশ্যই ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করুন। এ ছাড়া কোনো কারণে শিশুর জ্বর, শারীরিক ব্যথা ও হাঁচির মতো উপসর্গ দেখলে অবহেলা করবেন না। দ্রুত শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

ঘরের পরিবেশ শুষ্ক ও পরিচ্ছন্ন রাখা

পরিষ্কার ও শুষ্ক ঘরের পরিবেশ শিশুর নিরাপত্তা ও সুস্থতার জন্য জরুরি। জীবাণুর বিস্তার এড়াতে শিশুর খেলনা পরিষ্কার ও জীবাণুরোধী করে নেওয়া প্রয়োজন। ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচল আর্দ্রতা ও জীবাণুর বিস্তার কমায়।

সরাসরি ভেজা বা আর্দ্র স্থানে বসে থাকা সংবেদনশীলতা ও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। শিশুর থাকার স্থান পরিচ্ছন্ন ও শুষ্ক হলে শ্বাসনালির সমস্যাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটাই হ্রাস পায়।

মন্তব্য করুন