বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫, ৫ ভাদ্র ১৪৩২
ফোকাস ডেস্ক
ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতের ভবিষ্যৎ

ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে পাল্টাপাল্টি হামলা দৃশ্যত যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল, ঠিক সে মুহূর্তে নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের ‘অবিলম্বে অস্ত্রবিরতিতে’ সম্মত হওয়ার খবর দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এ ঘোষণার পরপরই ভারত ও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। তবে এর কয়েক ঘণ্টা পরই দুই দেশ পাল্টাপাল্টি অস্ত্রবিরতির লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। ভারত-পাকিস্তান আগেও কয়েকবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। তবে এবার প্রথমবার তারা ড্রোন যুদ্ধে নামে। ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর তারা সংঘাতে না জড়ালেও বাগযুদ্ধ- পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নেওয়া চালিয়ে যাচ্ছে।

এ সংঘাতের সূত্রপাত হয়েছিল—২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ পর্যটক নিহত হন। এ জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ৭ মে দেশটির অভ্যন্তরে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে অভিযান চালায় ভারতীয় বাহিনী। যদিও ওই হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে ইসলামাবাদ। চার দিন ধরে হামলা-পাল্টাঘাত চলে। ১০ মে অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস নামে পাল্টা অভিযান চালায় পাকিস্তান।

পাল্টাপাল্টি হামলাকে কেন্দ্র করে দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দেয়। অতীতেও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় ভারত-পাকিস্তান সংকটের সমাধান হয়েছে ঠিকই; কিন্তু এবার এ যুদ্ধবিরতি স্থায়ী হবে কি না ও সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত।

কী সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে: যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি আলোচনার পর ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তিনি তার মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে লেখেন, ‘আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাতজুড়ে আলোচনার পর ভারত ও পাকিস্তান একটি পূর্ণাঙ্গ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।’

ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

‘যুদ্ধ’ শব্দটির কোনো আনুষ্ঠানিক, সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা না থাকায় দেশগুলো চাইলে যুদ্ধ ঘোষণা না করেই দীর্ঘস্থায়ী সামরিক অভিযান চালাতে পারে। এই ধোঁয়াশার সুযোগে বিভিন্ন দেশের সরকার তাদের রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক স্বার্থ অনুযায়ী সামরিক কর্মকাণ্ডের রূপরেখা তৈরি করতে পারে।

বিক্রম মিশ্রি এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে যে আজ (১০ মে) ভারতীয় সময় বিকেল ৫টা থেকে স্থল, আকাশ ও সমুদ্র—তিন ক্ষেত্রেই সব ধরনের লড়াই ও সামরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।’ পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন, এ সমঝোতার পর ভারত ও পাকিস্তান সামরিক যোগাযোগ চ্যানেল এবং হটলাইনগুলো সচল করেছে।

ভারত ও পাকিস্তান কি সত্যিই যুদ্ধের মধ্যে ছিল; আনুষ্ঠানিকভাবে ছিল না। দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক মাত্রায় সংঘাত, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, ড্রোন হামলা ও গোলা বিনিময়ের ঘটনা ঘটলেও কোনো পক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি। ভারত ও পাকিস্তান তাদের সামরিক কর্মকাণ্ডকে সুনির্দিষ্ট ও সমন্বিত ‘সামরিক অভিযান’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। তবে ভারত ও পাকিস্তানের জন্য এ ধরনের পরিস্থিতি নতুন কিছু নয়। অতীতের সংঘাতগুলোর দিকে খেয়াল করলে দেখা যায়, বড় সংঘর্ষে বিপুলসংখ্যক সেনা ও নিরীহ বেসামরিক লোকজন নিহত হওয়ার পরও এ দুই দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি।

১৯৪৭ সালে দেশভাগ এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রথম যুদ্ধের পর থেকে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় একাধিকবার তাদের মধ্যকার বিরোধের সমাধান হয়েছে।

কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পর ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়। কার্যত তখন থেকে কাশ্মীর ভারতনিয়ন্ত্রিত ও পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত অংশে ভাগ হয়ে পড়ে। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে শুরু হওয়া যুদ্ধ ১৯৬৬ সালের জানুয়ারিতে তাসখন্দ চুক্তির মাধ্যমে শেষ হয়। এতে মধ্যস্থতা করেছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন।

নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতার সূচনা: গত কয়েক দশকে নিজেদের মধ্যে হওয়া একাধিক সংঘর্ষে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী একে অন্যের বিরুদ্ধে উন্নত মানের যুদ্ধবিমান, প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার করেছে। কিন্তু মে মাসে টানা চার দিনের সংঘর্ষে প্রথমবারের মতো নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ ব্যাপকভাবে একে অন্যের বিরুদ্ধে ড্রোন ব্যবহার করে।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর প্রতিবেশী ওই দেশ দুটির মধ্যে সংঘর্ষ থামে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার এ দুই শক্তি এখন ড্রোনকে ঘিরে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়েছে। রয়টার্সের নেওয়া দুই দেশের নিরাপত্তা কর্মকর্তা, শিল্প নির্বাহী, বিশ্লেষকসহ ১৫ জনের সাক্ষাৎকারে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ভারত ও পাকিস্তান গত বছর প্রতিরক্ষা খাতে ৯ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের বেশি খরচ করেছে।

মন্তব্য করুন