স্বপ্ন থেকে জেগে আবার ঢুকে যাই আরেক স্বপ্নেই,
স্বপ্নে ঘুরিফিরি, স্বপ্নে ডুবে আছি আপাদমস্তক;
স্বপ্নচারিতায় ভুলেছি চিরতরে কোথায় ঘরবাড়ি,
পেরোলে চৌকাঠ এপারে রঙধনু, ওপারে শূন্যতা।
স্বপ্ন সুধামাখা, মিথ্যে জাগরণ—কেবল চেয়ে-থাকা;
স্বপ্ন দূরগামী, মানে না সীমারেখা, অসহ ঘেরাটোপ।
স্বপ্ন জলযান, নিজেই কাণ্ডারী, নিজেই গতিপথ,
স্বপ্ন বাতিঘর, দূরের মঞ্জিল, প্রাজ্ঞ পাঞ্জেরী।
স্বপ্ন দেখে-দেখে, স্বপ্ন ফেরি করে সতত জেগে রই—
যাবো না ফিরে আর, স্বপ্ন থেকে যাক কেবল স্বপ্নই!
হালকা পদ্যে ছলাৎ ছল
টোকন ঠাকুর
গাছ জানে না, আমি কোথায় থাকি?
মাছ জানে না, আমি একটা পাখি!
পাখি জানে না, আমি তাদের কেউ
ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ জানে না, আমিও একটা ঢেউ!
কিন্তু আমি ফুলের বনে একটু বহে যাওয়া
ভাবতে পারো আদর আমি একপশলা হাওয়া
হয়তো আমি এর বাইরেও অন্য কিছু হয়ে
মোমের মতো পুড়তে পুড়তে, নিজে নিজেই ক্ষয়ে
একটুখানি আলোর পাশে তোমাকে দেখি, তুমি
তুমি কে আবার—কবিতা থেকে বেরিয়ে যাও এক্ষুনি
এতক্ষণ বেশ ভালোই ছিলাম নিজের মধ্যে
শুরুতে ছিল গাছ-পাখি-মাছ, ধরনধারণ হালকা পদ্যে
সে যাই হোক, এখন কিন্তু থামতে হবে, ‘থামো
রাত ৩টা, শোবো, ও ছাত্রী-ভূত মস্তক হইতে নামো।’
বিভাজন
এহসান হায়দার
দূরের সাইকেল ফেরে
নিকট চলে যায় দূরে—পাখি ওড়ে
কাছে থাকে না কিছুই;
মৌমাছির মধুবিত্তান্ত বিভাজনেরই
মন্দির, মসজিদ ধর্মালয়—কিছু নয়
ক্ষুধার ভেতর বাড়তে থাকে প্রেম
দু-একটা মাছ ভাজার স্বস্তি
শিশুকালে যারা শান্ত ছিল
দৃঢ় সে বিভাজনের ধারা
দূরের সাইকেল চাকা হয়ে ফেরে
জল
মহিম সন্ন্যাসী
কেমন অন্ধকার পায়ে চন্দ্রনগর থেকে চাঁদপুর হেঁটে চলেছিস
আমরা তো চিৎ হয়ে শুয়ে আছি পেনসিল টর্চের বিপরীতে কাচের ডোবায়
একটি তুলকালাম মার্বেল আমাদের প্রাণ ঘেঁষে ছুটে যায় নিশিপল্লীতে
যেখানে ভরদুপুরে শব্দপুতুল নিয়ে খেলা করে বধির কিশোরী
পরাজিত ডুবুরিরা সর্বজয়ার ঝোপে আগুন জ্বালায়
কবি ও ধার্মিকরা দোয়া ইউনুস পড়ে পরম বোয়াল হয়ে ওঠে
এসব হলুদ গ্রামে গবাদি মরিচখোর, মৎস্যাদি মৌমাছিভুক
বন্যহাতির পায়ে দুধের পায়েস ঢালে ইমাম সাহেব
সার্কাসবালিকার মাত্রাবৃত্ত থেকে খসে পড়ে কাঁচুলি ও মুক্তাক্ষর।
তুই যে এমন বোকা—লাশের জন্মদিনে জীবিত লোকের হাতে উপহার দিস
নিহত গরুর চাপে ঘাসের মৃত্যু দেখে আমরা কজন হেসে উঠি
তোর হাতে শোভা পায় কান্নার মালামাল, শোকের জিনিস।
মন্তব্য করুন